এসএসসি(ভোকেশনাল) -
পোল্ট্রি রিয়ারিং অ্যান্ড ফার্মিং-২ -
প্রথম পত্র (নবম শ্রেণি) |
| NCTB BOOK
18
18
১.৮ ব্রুডার ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্তকরণ
জীবাণুনাশক: যে সব ঔষধ বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করলে জীবাণু/রোগ জীবাণু মারা যায় তাই হলো জীবাণুনাশক। যথা; ফিনাইল, আয়োসান, স্যাভলন, ডেটল, সুপারসেপ্ট ইত্যাদি। জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহারের সাথে খামারে স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশ বজায় রাখার জন্য উন্নত ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা দরকার । জীবাণুনাশক ঔষধ উন্নত ব্যবস্থাপনার বিকল্প নয় ।
কখন জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহার করতে হয়?
প্রতিবার নতুন হাঁসের ঝাঁক খামারে তোলার পূর্বে উপযুক্ত জীবাণুনাশক ঔষধ বা রাসায়নিক দিয়ে ধুয়ে বা স্প্রে করে রোগ জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
খামারে কোন মহামারি দেখা দিলে ।
খামারে সংক্রামক রোগের উপস্থিতি প্রমাণিত হলে।
অসুস্থ হাঁস দ্বারা ব্যবহৃত আসবাবপত্র বা যন্ত্রপাতি জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
ডিম ফোটানোর যন্ত্র প্রতিবার ডিম বসানোর পূর্বে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।
ফোটানোর জন্য নির্ধারিত ডিম জীবাণুনাশক ঔষধ দিয়ে প্রয়োজন মত ধুয়ে নিতে হবে ।
একটি আদর্শ জীবাণুনাশক নিম্নলিখিত গুণসম্পন্ন হতে হবে-
দামে সস্তা হতে হবে।
দ্রুত পানির সাথে মিশে বা মিশ্রিত হয়ে যাওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে।
মানুষ ও অন্যান্য পশু পাখির জন্য বিষাক্ত হবে না।
সহজ প্রাপ্য হবে ।
কার্যকর হতে হবে।
পাত্রের বা ঘরের অবকাঠামোর জন্য ক্ষতিকর হবে না ।
গুদামজাত করার কারণে ব্যবহার সময় সীমার মধ্যে গুণগতমান নষ্ট হবে না ।
বিশ্রী দুর্গন্ধ মুক্ত হবে। সুগন্ধ হওয়া বাঞ্চনীয়।
বিষক্রিয়ার ক্ষমতা অনেক দিন পর্যন্ত জমে থাকবে না ।
মাংস/ডিমের মাধ্যমে বিষাক্ততা ছড়াবে না।
আজকাল বাজারে অনেক ধরনের জীবাণুনাশক ঔষধ কিনতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন পদ্ধতিতে হাঁসের খামারকে রোগ জীবাণুমুক্ত রাখা যায় কিন্তু সব পদ্ধতি সব ক্ষেত্রে সমভাবে কার্যকরী নয়। প্রতিটি জীবাণুনাশক ঔষধ তৈরির কোম্পানি কর্তৃক দেয়া নির্দেশিকা অনুসারে ব্যবহার করতে হবে। কোম্পানি কর্তৃক নির্দেশনা অনুসরণ না করলে খামার রোগ জীবাণুমুক্ত হবে না বরং খামারে বিদ্যমান রোগ জীবাণুগুলো অধিক শক্তিশালী হয়ে খামারের হাঁসগুলোর মধ্যে রোগ সৃষ্টি করতে পারে। জীবাণুনাশক ঔষধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক শক্তি সম্পন্ন বিভিন্ন রোগ জীবাণু পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে জনস্বাস্থ্যকে হুমকির সম্মুখীন করে তুলবে।
এদেশে বহুল ব্যবহৃত কতকগুলো রোগ জীবাণুনাশক ঔষধের নাম, ব্যবহার বিধি নিম্নের ছকে দেওয়া হলো-
জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহারে সতর্কতাসমূহ-
অধিকাংশ রোগ জীবাণুনাশক ঔষধ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তাই ব্যবহার করার সময় যাতে চোখে, মুখে না ঢোকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহারের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঘর থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
ফরমালিন ও পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট একত্রে মিশ্রিত হলে (ফিউমিগেশন) মারাত্মক বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয় যা মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাই ফিউমিগেশন প্রক্রিয়াটি সাবধানতার সহিত করতে হয়।
রোগ জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহার করার পর ঘরটি কয়েক দিনের জন্য খালি রাখতে হবে।
চুন পাউডার/কাপড় কাচার সোডা লিটারের সাথে ব্যবহার করলে পানির পরিবর্তে লিটারের তুষ বা কাঠের গুড়ার ওজনের সাথে অনুপাত নির্দিষ্ট করতে হবে।
নতুন বা পুরাতন যেকোনো ঘর হোক না কেন “অল ইন অল আউট” পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। একটি ঘরে এক ব্যাচ হাঁস পালন করে বিক্রয় করার কমপক্ষে ১৪ দিন পর অন্য ব্যাচ উঠাতে হবে। এ পদ্ধতি শুধু রোগ প্রতিরোধই করে না বরং রোগের জীবাণুকেও ধ্বংস করতে সহায়তা করে ।
ঘর পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে নিম্নলিখিত ধাপগুলো অনুসরণ করতে হবে-
হাঁস বিক্রয় করার পর সমস্ত সরঞ্জাম বের করতে হবে ।
পুরাতন লিটার ফার্ম থেকে কমপক্ষে ৫০০ মিটার দূরে সরিয়ে ফেলতে হবে।
ঘরের দেয়াল, পর্দা, ভেন্টিলেটর, দরজা, জানালা, নেট, ফ্যান, বাল্ব ইত্যাদি ঝেড়ে মুছে পরিষ্কার করতে হবে।
ঘরে কোনো মেরামত, সংস্কার প্রয়োজন হলে তার ব্যবস্থা নিতে হবে।
পরিষ্কার পানি দিয়ে দেয়াল, মেঝে, খাদ্য পাত্র ও পানি পাত্র ধুয়ে দিতে হবে। পাইপ দিয়ে উচ্চ চাপযুক্ত পানি প্রবাহের মাধ্যমে ঘর পরিষ্কার করা উত্তম।
জীবাণুনাশক (পভিসেপ, সুপারসেপ্ট, আয়োসান) দিয়ে খাবার পাত্র, পানি পাত্র, দেয়াল, মেঝে, ছাদ, পর্দা ও খামারের আশেপাশ জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
ভিজা মেঝেরে উপর ১০০ বর্গফুট ১ কেজি হারে শুকনা কস্টিক সোডা ছড়াতে হবে এবং ১৫ মিনিট অপেক্ষার পর মেঝে শুকিয়ে গেলে কস্টিক সোডার উপর হালকা করে পানি স্প্রে করে ঘর ধুয়ে ফেলতে হবে।
ঘরের চারপাশে ৫-৬ ফুট পরিমাণ জায়গায় খাস কেটে পরিষ্কার করতে হবে এবং পুরাতন মুরগির ময়লা থাকলে তা পরিষ্কার করে ব্লিচিং পাউডার ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
বাচ্চা উঠানোর ৬ দিন পূর্বে সমস্ত জিনিসপত্র আবার জীবাণুযুক্ত করে শুষ্ক করে ভিতরে রাখতে হবে।
বাচ্চা ব্রুডিং এর ১ দিন পূর্বে পিটার বিছাতে হবে। ঘরে সমস্ত সরঞ্জামাদি স্থাপন করে বাচ্চা গ্রহণের ১২ ঘন্টা পূর্বে সম্পূর্ণ ঘর, চট বা পলিথিন দিয়ে ঘিরে ফিউমিগেশন উপকরণ ব্যবহার করে ঘর কিউমিগেশন করতে হবে।
ফিউমিগেশনের জন্য প্রতি ১০০ ঘনফুট স্থানের জন্য ৬০ গ্রাম পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ও ১২০ সি:সি: ফরমালডিহাইড ব্যবহার করতে হয়।
ফিউমিগেশন করার ৩০ মিনিট পর পর্দা সরিয়ে সম্পূর্ণ গ্যাস বের করে দিতে হবে।
ফিউমিগেশনের পর বাচ্চা তোলার ২/৩ ঘন্টা পূর্ব পর্যন্ত ঘর তালাবদ্ধ রাখতে হয়।
বাচ্চা উঠানোর কয়েকদিন পূর্ব থেকেই ঘরের ফুটবাথে জীবণুনাশক রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
বাচ্চা উঠানোর পর প্রতিদিন ১ বার করে ঘরের বাইরের চতুপার্শ্বে ৫% ফরমালিন যারা স্প্রে করতে হবে।
নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরের আশেপাশে কোনো প্রাণি বা লোক চলাচল বন্ধ রাখতে হবে।
শ্রেণির তাত্ত্বিক কাজ
জীবাণুনাশক ঔষধ কাকে বলে?
জীবাণুনাশক ঔষধ কখন ব্যবহার করতে হয়?
একটি আদর্শ জীবাণুনাশক ঔষধের ৫টি গুণাবলী লেখা।
জীবাণুনাশক ঔষধ ব্যবহারের সময় কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়?